শামস শামীম::
নির্মাণের পর থেকেই বন্ধ আছে সুনামগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিশুদ্ধ খাবার পানি পরীক্ষার ল্যাবরেটরি।
লোকবল না দিয়ে ২০২২ সালে মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র দেওয়া হলেও তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কোনও কাজে আসেনি পরীক্ষাগারটি। কবে চালু হবে জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। ল্যাবটি চালু না হওয়ায় এখন সিলেটস্থ বিভাগীয় ল্যাব থেকে নলকূপসহ বিভিন্ন উৎসের বিশুদ্ধ পানি পরীক্ষা করা হচ্ছে। এতে ভুক্তভোগীদের সময় ও অর্থ অপচয় হচ্ছে। তাছাড়া জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সরকারের উদ্দেশ্যও ব্যাহত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ গণস্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে ‘স্ট্রেংথেনিং ওয়াটার কোয়ালিটি টেস্টিং সিস্টেম’ প্রকল্পে সুনামগঞ্জসহ সারাদেশে ৫২টি জেলা পানি পরীক্ষা ল্যাব নির্মাণকাজ শুরু হয়। খাবার পানিতে জীবাণু, রাসায়নিক উপাদান, আর্সেনিক ও অন্যান্য দূষণের কারণে জলবাহিত রোগ থেকে প্রতিকারের লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় পানি পরীক্ষাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। জেলা থেকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে সহজে খাবার পানি পরীক্ষাগারটি চালু হলে বিশুদ্ধ পানির পরীক্ষা সহজ হতো এবং পানিবাহিত রোগ থেকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকতো বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
জানা গেছে, খাবার পানির উৎস থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে ডেটা সংগ্রহ ও ফলাফল প্রয়োগ করে সুস্থ ও নিরাপদ পানির নিশ্চয়তাই ছিল প্রকল্পের মূল্য লক্ষ্য। পানির গুণাগুণ পরীক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে শিশু মৃত্যুর হার ও জলবাহিত রোগ কমতো বলেও প্রকল্পের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালেই সুনামগঞ্জ শহরের নতুনপাড়ায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ক্যাম্পাসে দোতলা ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ করে হস্তান্তর করা হয়েছিল। লোকবল না দিয়ে ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল, ২৬ অক্টোবর ও ১৭ জুলাই এবং ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ মাসে কোটি টাকার যন্ত্রাংশ, কম্পিউটার, এসি, ফার্নিচার, ক্যামিকেলসহ মূল্যবান ফার্নিচার দেওয়া হয়। এর মধ্যে অঃড়সরপ অনংড়ৎঢ়ঃরড়হ ংঢ়বপঃৎড়ঢ়যড়ঃড়সবঃবৎ (অঅঝ) ও ঈড়সঢ়ষবঃব ধপপবংংড়ৎরবং, ঐঈষঢ়ধপশধমব, ঐুফৎরফব ংুংঃবস, ধঁঃড় ংধসঢ়ষবৎ, পড়সঢ়ৎবংংড়ৎ মূল্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের রিপোর্টে বলা হয়েছে যন্ত্র ও আসবাবপত্র ‘অদ্যাবধি স্থাপিত হয় নাই’। এভাবে রাসায়নিক দ্রব্য, কম্পিউটার, প্রিন্টার, এসিসহ ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ এবং মূল্যবান ফার্নিচার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ২০২২ সালের জুন থেকে পানি পরীক্ষার এই ল্যাবটিতে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরুর কথা ছিল বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু ভবন ও যন্ত্রাংশ দিলেও কাজ শুরুর জন্য জনবল দেওয়া হয়নি। যার ফলে তালাবদ্ধ আছে ভবনটি। ল্যাবটি চালু করতে হলে ক্যামিস্ট, জুনিয়র ক্যামিস্ট, স্যাম্পুল এনালাইজার, স্যাম্পুল কালেক্টরের জরুরি প্রয়োজন। কিন্তু এই এসব পদে এখনো একজনকেও নিয়োগ দেয়া হয়নি। কবে নিয়োগ দিয়ে পরীক্ষাগার চালু করা হবে কেউ জানেনা।
হাওর আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, হাওরাঞ্চল পানির আধার। কিন্তু বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত অসচেতন মানুষজন। খাবারের বিশুদ্ধ পানির অভাবে এখনো হাওরাঞ্চলে নানা পানিবাহিত রোগে ভোগছে মানুষ। পানি পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলে সরকারি-বেসরকারিভাবে যারা খাবার পানির উৎসের সংস্থান করেন তারা সহজে পরীক্ষার সুযোগ পেয়ে এ বিষয়ে সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নিতে পারতেন। সরকার কোটি টাকা খরচ করে, কোটি টাকার যন্ত্র দিয়ে ভবন করে দিলেও এটা চালুর জন্য কাউকে দেয়নি। এটা একটা প্রহসন। অবিলম্বে লোকবল দিয়ে এটা চালু করে দিতে হবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠিকাদার উজ্জ্বল মিয়া বলেন, পানি পরীক্ষাগারটি চালু না থাকায় আমাদেরকে সিলেট গিয়ে পানি পরীক্ষা করাতে হয়। এতে সময় ও অর্থ অপচয় হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ খালেদুল ইসলাম বলেন, ভবনের সঙ্গে পানি পরীক্ষার যন্ত্রাংশ ও ফার্নিচারও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা করার কেউ নেই। আউট সোর্সিং দিয়েও যাতে সেবাটি চালু করা হয় সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। তবে কবে চালু হবে নির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
ভবন আছে, জনবল নেই
নির্মাণের পর থেকেই বন্ধ খাবার পানি পরীক্ষাগার
- আপলোড সময় : ০৯-১০-২০২৫ ১২:০৮:১৩ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৯-১০-২০২৫ ১২:১১:৩৫ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ